নিশিনাথতলার বৈশাখী মেলা
নড়াইলের নিশিনাথতলার বৈশাখী মেলা প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো। ধর্মীয় বিষয়কে কেন্দ্র করে শুরু হলেও দিন দিন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে এই মেলা। নড়াইল শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে রূপগঞ্জ বাজার। রূপগঞ্জ বাজার থেকে ভিক্টোরিয়া কলেজের পাশে চিত্রা নদীর জমিদার বাড়ির বাঁধাঘাটের সামনে দিয়ে ১০০ গজ এগোলে নিশিনাথতলা বটতলা। বিশাল এই বটগাছকে কেন্দ্র করে অন্তত কয়েক একর জায়গাজুড়ে বসে বৈশাখী মেলা । শুরুর দিকে ৩২ চাকা ও চারতলাবিশিষ্ট রথ ছিল এই নিশিনাথতলায়। প্রতিবছর বৈশাখে রথের মেলাও বসত। নিশিনাথতলা থেকে রথের গাড়ি টেনে নিয়ে যাওয়া হতো নড়াইলের আরেক প্রান্তে দুর্গাপুরে, যেখানটা আজও রথখোলা বলে পরিচিত। সেই রথ টেনে বৈশাখী মেলা শুরু হতো আর উল্টোরথে বৈশাখের শেষ দিনে রথ এসে ভিড়ত নিশিনাথতলায়। মেলার ব্যাপ্তি বেড়ে যাওয়ায় এখন মেলার সময় রথ টানা না হলেও এ মেলাকে কেন্দ্র করে অন্য সময়ে রথ টানা হয়। মাসব্যাপী নিশিনাথতলার বৈশাখী মেলায় গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার লোকের সমাগম হয়। সপ্তাহের শনি আর মঙ্গলবার এই সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। জেলার বাইরে থেকে হাজারো দর্শনার্থী এসে ভিড় করে। ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকের আত্মীয়স্বজন আসে মেলাকে উপলক্ষ করে। জেলার সর্ববৃহৎ এই বৈশাখী মেলায় মিষ্টি থেকে শুরু করে সব ধরনের অলংকার, মাটির তৈজসপত্র, বাঁশের তৈরি সামগ্রী আর খেলনা পাওয়া যায়। ছোট ছোট শতাধিক দোকান বসে মেলা প্রাঙ্গণে। এ ছাড়া হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ গীতা, মহাভারত, রামায়ণসহ নানা ধরনের বই কেনাবেচা হয়। জপের মালা আর রুদ্রক্ষের মালা কেনার জন্য ভিড় করে অনেকে। মেলার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে বিক্রি হয় শাঁখা আর সিঁদুর। নববধূরা নিজেদের ধর্মীয় আচার মানতে স্বামীর মঙ্গলের জন্য নতুন নতুন শাঁখা কিনতে ছুটে আসে নিশিনাথতলার মেলায়।