স্থান নামকরণ

বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের কিছু গ্রামের নামকরণ- নড়াইল সদর, নড়াইল

বেতভিটা: বেতগাছের ঝোঁপ-ঝাড় সমন্বিত এলাকা বিধায় স্থানের নাম হয়েছিল বেতের ভিটায় লোকবসতি গড়ে ওঠায় পরবর্তীকালে তা বেতভিটায় পরিণত হয়েছে।

বল্লারটোপ : নড়াইলের আঞ্চলিক ভাষায় বোলতাকে বলা হয় বল্লা। আর ‘টোপ’ হলো চাক শব্দজাত। যেখানে প্রথম বসতি স্থাপনকারীরা বল্লারটোপ বা বোলতার চাক দেখে সেই স্থানের নাম হয় বল্লারটোপ। এখানকার এক ব্যক্তি মুঘল শাসনামলে দিল্লিতে বড় কোন প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করতেন। তিনি ফারসিতে একখানি ‘মসনবি’ রচনা করেছিলেন।

শম্বুডাঙ্গা: শম্বুক বা শামুকের প্রাধ্যান্য ছিল যে বিলের পানিতে সেই বিল ভরাট হলে লোক বসতি গড়ে ওঠে তার নাম হয় শম্বুকের ডাঙ্গা। পরবর্তীকালে শম্বুকের ডাঙ্গা হয়েছে শম্বুডাঙ্গা।

দৌলতপুর: ধনী ব্যবসায়ীদের বসবাস স্থান ছিল এখানে, এ জন্য স্থানের নাম হয়েছে দৌলতপুর। ফারসি দৌলত শব্দের অর্থ হল ধনসম্পদ।

দারিয়াপুর: প্রাচীনকালে এখানে ছিল বিশাল জলাশয়। কারো কারো মতে ছিল সাগর! সাগর শব্দটিকে ফারসিতে বলা হয় দরিয়া। সেই দরিয়া কালের নিয়মে ভরাট হয়ে গেল কিন্তু স্থানের নাম হয়ে গেল দরিয়াপুর। পরবর্তীতে দরিয়াপুর থেকে শব্দটি পরিবর্তন হয়ে হল দারিয়াপুর। দারিয়াপুরের প্রাচীন নদীর চিহ্নিত স্থানে নদী বন্দরের অবস্থানকে লক্ষ্য করা যায়। এখানে বিখ্যাত সাধক ওসমান ফকিরের মাজার বিদ্যমান।

হোগলাডাঙ্গা: জলজ উদ্ভিদ হোগলা চাষের ডাঙ্গাকে কালক্রমে হোগলাডাঙ্গা নামে পরিচিত পায়। এই স্থানে আজও হোগলা জন্মে।

আগরাহাটি: অগ্রে বা আগে সৃষ্ট হাট থেকে স্থানের নাম হয় অগ্রহাট। হাট অর্থ এখানে লোকালয় বোঝানো হয়েছে। নড়াইল এলাকায় কখনো হাট ও বাজার অর্থে লোকালয় বোঝায়। বিস্তৃত বিলের মধ্যে অগ্রে বসতি স্থাপিত হওয়ায় উক্ত স্থানের নাম হয় অগ্রহাট। সেই অগ্রহাট থেকে শব্দটি থেকে পরে হয়েছে আগরাহাটি।

বাঁশগ্রাম: এই এলাকায় প্রাচীনকাল থেকে প্রচুর পরিমাণে বাঁশ উৎপাদিত হয়। আজো আছে অসংখ্য বাঁশ ঝাড়। এই বাঁশ থেকেই স্খানের নাম হয়েছে বাঁশগ্রাম।

কোমাডাঙ্গা: ফারসি কামার শব্দ দ্বারা বুঝায় চাঁদকে। প্রাচীনকালে চন্দ্রাকৃতির ডাঙ্গা থেকে স্থানের নাম হয় কামারডাঙ্গা। এই কামারডাঙ্গা নামটি পরিবর্তিত হয়ে স্থাননাম হয়েছে কোমাডাঙ্গা ।

ডুমদি: দিয়াড়া শব্দ দ্বারা বোঝায় প্রাচীন নদীর ফেলে যাওয়া গোবকে। এককালে এই অঞ্চলে কালিগঙ্গা প্রবাহিত ছিল। কালিগঙ্গার ফেলে যাওয়া দিয়াড়া বা গোব বা জলাশয়ে নতুন বসতি স্থাপনকারী লোকেরা ডুবিয়ে গোসল করত। এইভাবে স্থানের নাম হয়েছিল ডুবদিয়াড়া। এই ডুবদিয়াড়া থেকে ডুবদিয়া এবং আরো পরবর্তীকালে স্থানের নাম হয়েছে ডুমদি।
ডুমদি বিখ্যাত কবিয়াল বিজয় সরকারের জন্মভূমি।

নন্দকোল: নন্দের কৌল অর্থ্যাৎ জনৈক নন্দ কর্তৃক অধিগ্রহীত কৌল বা স্থান। কৌল হলো শর্তসাপেক্ষ জমির চাষাবাদের জন্য ইজারা গ্রহণ। নন্দের কোল থেকে স্থানের নাম হয়েছে নন্দকোল।

কামালপ্রতাপ: স্থানীয় শাসক কামাল ও প্রতাপের নাম অনুসারে স্থানের নামকরণ হয়েছে কামালপ্রতাপ। এই গ্রামে জমিদার মুন্সি ইরফানউদ্দিন, রংপুর সদরের আলা মুন্সি তমিজউদ্দিন, সাবজজ মুন্সি মফিজউদ্দিন প্রমূখের জন্মভূমি। এখানে সাধক লেংটা শাহ ফকিরের মাজার বিদ্যমান।

তথ্যসূত্রঃ নড়াইল জেলা সমীক্ষা ও স্থাননাম- মহসিন হোসাইন।

error: Hi, কপি করার কি দরকার? আমাকে মেইলে জানান।