লেংটা শাহ – নড়াইলের কিংবদন্তি
কিংবদন্তি শব্দের অর্থ জনশ্রুতি। লোক পরস্পরায় শোনা কথা। কিংবদন্তি ইতিহাস নয়। কিন্তু শুনতে শুনতে ইতিহাসের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে এমনটি মনে হলেও জনশ্রুতির কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে বলে মনে হয় না। তবে জনশ্রুতি যে একেবারে ভিত্তিহীন তাও নয়। অনেক সময় এই জনশ্রুতির ওপর নির্ভর করে অনেক ঐতিহাসিক তথ্যের সন্ধান যে পাওয়া যায় না, তাও নয়। আমাদের নড়াইল জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত কিংবদন্তি ধারাবাহিক ভাবে উপস্থাপন করা হল।
লেংটা শাহ
কথিত আছে ঘটনাটি উনবিংশ শতাব্দীর। বর্তমানে নড়াইল সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের অধীন কামালপ্রতাপ গ্রাম। উক্ত গ্রামের অভিজাত পরিবারের জনৈক রমণী একদিন ঝোপ-জঙ্গলের পাশে বেয়ে চলা মেঠোপথ ধরে নিজের অর্থ্যাৎ স্বামী গৃহে ফিরছিলেন। হঠাৎ পথের মাঝে শিশুর কান্না শুনে তিনি থমকে দাঁড়ান এবং চারিদিকে তাকিয়ে বাগানের একপাশে রাস্তার উপর একটা শিশুকে দেখতে পান। শিশুর কান্নায় মহিলার খুব মায়া হয়-তিনি শিশুটিকে কোলে তুলে বাড়ি নিয়ে আসেন। শিশুটি যতই বড় হতে থাকে ততই সে তার শরীরে কোন পোশাক রাখতে চাইতো না। পোশাক পরালে সে কাঁপতে থাকে, জ্বর হয়, খাবার ইচ্ছাও হত না! প্রায়ই ফাঁকা স্থানে কোন গাছতলায় বসে চোখ বুজে বিড় বিড় করতো! গ্রামের নারী-পুরুষ কারো দিকে তাকায় না। এই আছে আবার হঠাৎ দেখা গেল সে নেই!
মানুষজন ধীরে ধীরে তাঁকে ভক্তি শ্রদ্ধা করতে শুরু করল এবং সবাই তাকে নেংটা শাহ বলে ডাকত। যে মহিলার নেংটাশাহকে তুলে নিয়ে এসে বড় করেছেন তার নিজের একমাত্র ছেলে ছিল জজ। একদিন ছুটি নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে নদী পার হওয়ার সময় হঠাৎ ঝড়ো বাতাসে নৌকা দুলতে দুলতে পানি উঠে নৌকা প্রায় ডুবুডুবু। এমন সময় নেংটা শাহ দৌড়ে এসে ঘর হতে একটা ধামা (ধান/চাল রাখার পাত্র, বেত দিয়ে তৈরি) নিয়ে উঠানে দাড়িয়ে নৌকার পানি ফেলতে থাকার ভঙ্গিতে অনেকক্ষণ পানি ফেলল, তারপর বলল, যা এবার বেঁচে গেলি! নেংটাশাহর মা এটা দেখে কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করায় নেংটাশাহ বলল, মা জজের নৌকা ডুবে যাচ্ছিল- বেঁচে গেছে। জজ বাড়ি এলে নেংটা শাহর কথার সত্যতা প্রমানিত হল।
তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা, নড়াইল।