নড়াইলের গাসসি উৎসব
লোহাগড়া উপজেলায় আশ্বিন মাসের শেষ দিকে গাসসি উৎসব হয়। এদিন এ অঞ্চলের নওয়াগ্রাম, কাশিপুর, গন্ডব, জয়পুর, লোহাগড়াসহ বিভিন্ন গ্রামে এই গাসসি উৎসব হয়ে থাকে।
গ্রাম ভেদে এই উৎসবে একটু পার্থক্য দেখা যায়। এদিন এ উপলক্ষে ভোর বেলায় ছেলেমেয়েরা পাড়ায় পাড়ায় কুলো, ঝাঁঝর, থালা-বাসন বাজিয়ে উচ্ছ্বাস-আনন্দ প্রকাশ করে। কোন কোন গ্রামে ছেলেমেয়েরা এসব বাজিয়ে মশার গান গেয়ে নিজ গ্রামের মশা অন্য গ্রামে বা এক বাড়ির মশা অন্য বাড়িতে তাড়ায়! লোকবিশ্বাস রয়েছে, এতে গ্রামে রোগ-ব্যাধি প্রবেশ করতে পারবে না।
এই উৎসবের পরদিন থেকে গ্রামের সবাই তালের আঁটি থেকে শাঁস বের করে খায়। আশ্বিন মাস যাওয়ার দিন গ্রামের শিশু-কিশোরেরা বেশ ঘটা করে এই তাল-শাঁস খাওয়ার উৎসব করে। আশ্বিনের শেষে কুলা বা থালা না বাজালে তালের আঁটি খাওয়া যায় না। খেলে চোখ অন্ধ হয়ে যায়। কোন গ্রামে গরুর রোগ ব্যাধি থেকে মুক্ত করতে এদিন সকাল বেলায় কলার পাতার মধ্যে চালের গুড়ো দিয়ে চুষি পিঠা ও কাঁচা তিত পুঁটি মাছ মুড়িয়ে খাইয়ে দেওয়া হয়। এতে গরু রোগ বালাই মুক্ত থাকবে বলে বিশ্বাস রয়েছে।
আবার কোন গ্রামে এদিন ধানকে সাধ খাওয়ানো হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ে যেমন বিবাহিতা মেয়েদের ৭ মাসের গর্ভবতী হলে বাপের বাড়িতে সাধ খাওয়ানো হয়। তেমনি আশ্বিন মাসে আমন ধান পাকার পূর্বে ধানকে সম্মান দেখিয়ে ধান গাছের দিকে তাকিয়ে এক ধরনের ছড়া বলে। যা ধানকে সাধ খাওয়ানো বলে। যেমনঃ
এককান ভূইয় চারকেন কোনা, দান ফুলিছে কাইলে সোনা, দানরে তুই সাদ খা, দানরে তুই সাদ খা, বুড়ি গ্যালো দোড়োইয়ে, দান পড়িছে গোড়োইয়ে, দানরে তুই সাদ খা, দানরে তুই সাদ খা।।
এদিন সাধারণত শিশু কিশোর-কিশোরী এমনকি বড়রাও হাতে পায়ে কাঁচা হলুদ নিম পাতা মেখে গোসল করে। এতে চুলকানি, পাঁচড়া বা অন্য কোন ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকবেন। অধিকাংশ বাড়িতে গুড়ের রসের সিন্নি ও কুলি পিঠা তৈরি হয়।
গাসসির গানঃ
মশা মশা কান কোরেশা কানে বাঁধা দড়ি সকল মশা তাড়ায় দিলাম কানুর মার বাড়ি কানুর মারে খুচে খুচে খা। কচু বুনে মশারে ভাই লম্বা লম্বা হুল সকল মশা তাড়াইয়া দিলাম বড়ো গাঙ্গের কূল গাঙ্গের কূলেগে খুচে খুচে খা। কলা বুনে মশারে ভাই মুখে চাপদাড়ি সকল মশা তাড়ায়া দিলাম গেদুর মার বাড়ি গেদুর মারে খুচে খুচে খা। সৌজন্যতাঃ বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা, নড়াইল।