নবগঙ্গা – নড়াইলের নদী পরিচিতি
পদ্মা নদী হতে জন্ম নিয়েছে গৌরী বা গড়াই নদী। ওই নদী থেকে মাথাভাঙ্গা নামে আরেকটি নদী জন্ম নিয়েছে, আবার আলমডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের কাছে মাথাভাঙ্গা নদী হতে কুমার নামের প্রাচীন নদীটি বৃহত্তর যশোর জেলায় প্রবেশ করেছে। এই কুমার নদীর পর মাথাভাঙ্গা হতে নবগঙ্গা নামে আরেকটি নদী উৎপত্তি লাভ করেছে। এই নবগঙ্গা চুয়াডাঙ্গার পূর্ব দিকে এক বিলের মধ্যে পড়ে মূল নদীর সঙ্গে সংযোগ হারায়। ওই স্থানে নদী মজে গিয়ে গতিরুদ্ধ হয়ে আছে।
মাগুরা শহরের উত্তরাংশে মুচিখালি নামক একটি খালের দ্বারা নবগঙ্গার সঙ্গে কুমার নদীর মিলন ঘটে। এরপর নবগঙ্গা অধিক শক্তিশালী হয়। নবগঙ্গা নদী মাগুরা, বিনোদপুর, শত্রুজিৎপুর, নহাটা ও সিঙ্গিয়ার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে লোহাগড়া থানার নদীর পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণডাঙ্গা, রায়গ্রাম, কলাগাছি, এড়েন্দা, লক্ষীপাশা, লোহাগাড়া, কুমারকান্দা, কামঠানা, তেঁতুলিয়া ও কালনা হয়ে মধুমতিতে প্রবাহিত হতো। সম্ভবত মুঘল শাসনামলে নবগঙ্গা নদীর একটি শাখা মল্লিকপুর, কোলা, দিঘোলিয়া, তেলপাড়া হয়ে কালিয়া থানায় প্রবেশ করেছিল। ইংরেজ কোম্পানি শাসন আমলে এই খালটির সংস্কার করা হয় এবং এর পর থেকে নবগঙ্গার ওই অংশকে “ব্যাণ্ডকাটার খাল” বা ‘বানকানার’ খাল বলা হয়। মিঃ ব্যাণ্ড ছিলেন লোহাগড়া এলাকার একজন নীলকুঠিয়াল। তিনি মোঘল আমলের খনন করা খালটি সংস্কার করেছিলেন।
নড়াইল জেলার বিরাট অংশের ভূমি গঠন ও সভ্যতা বিকাশে নবগঙ্গা নদীর বিশেষ অবদান রয়েছে। এক সময় সমুদ্র উপকূল ও সুন্দরবন এ বসবাসরত মগ ও হার্মাদ দস্যুরা নবগঙ্গা নদীর দুই তীরের মানুষের উপর নির্মম ও পাশবিক অত্যাচার করেছে। নবগঙ্গা নদীর দুই তীরের জনগোষ্ঠির মধ্যে এখনো বহু মোগোসাহা, মোগোনমো, মোগোকায়স্তের সন্ধান পাওয়া যায়। তারা এক সময়কার মগদের অত্যাচার এর ইতিহাস বহন করে চলেছে।
১৯৭৫/১৯৭৬ সাল পর্যন্ত নবগঙ্গা নদীর নাব্যতা ছিল। খুলনা হতে মহাজন’ বড়দিয়া, লোহাগড়া, লক্ষীপাশা হয়ে লঞ্চ সরাসরি মাগুরা জেলার বিভিন্ন অংশে যাতায়াত করতো। অথচ এখন নবগঙ্গার ওই অংশের কোথাও কোথাও রীতিমতো চাষাবাদ হয়।
নড়াইল জেলার নবগঙ্গা নদীর যে সবস্থানে লঞ্চ ঘাট ছিল সেগুলো হলোঃ
১.বড়দিয়া
২.লুটিয়া
৩.চর কোটাখোল
৪.দিঘলিয়া
৫.পাচুরিয়া
৬.চর মল্লিকপুর
৭.লোহাগড়া
৮. লক্ষীপাশা
৯.এড়েন্দা
১০.কলাগাছি
১১.ব্রাহ্মণডাঙ্গা
১২.নলদী ও
১৩.মিঠাপুকুর।
১৯৫০/১৯৫১ সাল পর্যন্ত নবগঙ্গা নদীর উপর দিয়ে স্টিমার চলাচল করতো। পানি প্রবাহের স্বল্পতায় স্টিমার চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নবগঙ্গা নদীর যে সমস্ত স্থান স্টিমার স্টেশন গুলো ছিল তা হলোঃ
১.বড়দিয়া
২.দিঘোলিয়া
৩.কোলা
৪.জয়পুর
৫.এড়েন্দা
৬.কলাগাছি
৭.ব্রাহ্মণডাঙ্গা ও
৮.নলদী
তথ্যসূত্রঃ নড়াইল জেলা সমীক্ষা ও স্থাননাম- মহসিন হোসাইন।