এক এলাকায় একজন মানুষ যথেষ্ট জ্ঞানী ছিল। ওই অঞ্চলের মানুষের যে কোনো সমস্যা সমাধানের উপায় জানতে কিংবা কোন কাজ করার আগে কি করা উচিত এমন সিদ্ধান্ত নিতে এলাকার মানুষ ওই জ্ঞানী লোকের কাছে যেত। সকলে ওই জ্ঞানী ব্যক্তিকে পণ্ডিতজি বলে ডাকত। একদিন এলাকায় তিন ব্যক্তি একত্রে পন্ডিতজির বাড়িতে যাবার উদ্দেশ্যে নদীর তীর বেয়ে হেঁটে রওয়ানা হল। তারা সকলে দেখতে পেল পণ্ডিতজি নৌকায় চড়ে কোন দিকে যেন গমন করছেন। তখন লোক তিনটি নদীর কূলে দাঁড়িয়ে একত্রে পণ্ডিতজিকে হাতের ইশারায় এবং চিৎকার করে ডাকতে থাকে। লোকগুলির ডাকে পণ্ডিতজি মাঝিদের নৌকা থামানোর আদেশ করেন এবং নদীর কিনারে নৌকা ভিড়িয়ে লোকগুলির কাছে জিজ্ঞাসা করেন- আমি খুব ব্যস্ত কি ব্যাপার তোমরা আমার যাত্রায় বাধা দিলে কেন-তা জানাও।
প্রথম লোকটি বলল পণ্ডিতজি আমি জীবনে প্রথম একটু জমিজমা কিনতে চাই। এ বিষয়ে আপনার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমি জমিজমা করায় ক্রয় করবো। জমির ধরন কী হবে দয়া করে জানাবেন কি?
দ্বিতীয় লোকটি বলল- আমার একমাত্র পুত্রসন্তানকে বিয়ে দিতে কেমন ঘরের এবং কি ধরনের মেয়ে পছন্দ করলে আমার সন্তানের দাম্পত্য জীবন সুখের হবে, দয়া করে জানালে আমি সে মতে ব্যবস্থা নেব।
তৃতীয় লোকটি বলল- পণ্ডিতজি আমি গরিব মানুষ, একজোড়া গরু কিনবো এবং এদের দিয়ে হাল চাষ করে জীবন চালাবো। কেমন ধরনের গরু কিনলে হালচাষে আমি উপকৃত হব ? পণ্ডিত জি দয়া করে বললে সেই রকম গরুর আমি ক্রয় করব।
পণ্ডিতজি একটা শ্লোকের মাধ্যমে ওই তিন ব্যক্তির জবাব দিলেন এবং মাঝিদের নৌকায় সামনে চালানোর নির্দেশ দিলেন
শ্লোকটি হচ্ছে-
ধারে উঁচু–মদ্দি নিচু –ঘন বাড়ায় পাও
যার মা ভালো তার ঝি ভালো, বাওরে বিটা বাও।
অর্থাৎ চারিদিকে উচু মধ্যে নিচু জমি ক্রয় করলে লাভবান হওয়া যায়
যে গরু হাটতে গেলে ঘন ঘন পা ফেলে ওই গরু কাজ করবে ভালো হয়
যে মায়ের স্বভাব চরিত্র ভালো, সেই মায়ের কন্যা স্বাভাবিকভাবেই ভালো হয়।
তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা, নড়াইল।